ঢাকা ০১:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে গ্রামে রহস্যজনকভাবে ঘুমিয়ে পড়ে সবাই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:১৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ১৬৩ বার

রুশ সীমান্ত থেকে প্রায় ১৫০ মাইল দূরে অবস্থিত উত্তর কাজাখস্তানের দু’টি গ্রাম কালাচি ও ক্রাস্নোগরস্ক। সাবেক সোভিয়েত শাষণামলের অধীনে থাকলেও এখানে জার্মান ও রুশদের বেশ কর্তৃত্ব ছিলো।

একটা সময় এই গ্রাম দু’টোতে ছয় হাজারেরও বেশি লোক বসবাস করতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে গ্রামে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা হ্রাস পায়। কোনো এক কারণে বেশিরভাগ লোক অন্যত্র বসবাস শুরু করেন।

জনসংখ্যা হ্রাসের পর আবার নতুন করে হাজার হাজার লোক এখানে আসতে শুরু করে, তবে তাদের একটি অংশ একটি অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী হন।

ঘটনাটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসের দিকে। সবকিছুই খুব স্বাভাবিকভাবে চলছিলো। অন্যান্য দিনগুলোর মতই নতুন আরেকটি দিন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো সকলে। কিন্তু হঠাৎ করে গ্রামের অনেকে তাদের জীবনে একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করেলো।

গ্রামের অনেকেরই হঠাৎ অদ্ভুত রকমের ঘুম পাচ্ছিলো। তাদের শরীরে এক ধরনের অসম্ভব  রকমের ক্লান্তি দেখা দিলো যে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না। রাস্তার পাশে বসে থাকা অবস্থায়ও অনেকে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিলো। তাদের মধ্যে অনেকেই যারা কর্মস্থলে ছিলো তারা কর্মস্থানের টেবিলে ঘুমিয়ে পড়ছিলো। দু’টি গ্রামেরই প্রায় দেড়শো জন মানুষ এই অদ্ভুত ঘুমের ব্যাধীতে ভোগেন।

এই ঘুমের ব্যাধীটি এতোটাই ছড়াচ্ছিলো যে যারা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলো তারা তাদের চোখ খুলে রাখতে পারছিলো না এবং যারা এভাবে আকস্মিক ঘুমিয়ে পড়ছিলো তারা ঘুম থেকে জাগার পর কিছুই মনে রাখতে পারছিলো না। যেমন, কখন তারা ঘুমিয়েছিলো অথবা তারা কেন ঘুমিয়েছিলো এসব কিছুই তারা মনে করতে পারছিলো না। মাথা ব্যাথা এবং শারীরিক দুর্বলতাও ছিলো তাদের। এমনকি এটাও হয়েছে যে তারা একদিনের ভিতর পাঁচ থেকে ছয়বার ঘুমিয়েছে।

গ্রামের এই অস্বাভাবিক ব্যাপারটি পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। অনেকে একে ‘ফাঁপা ঘুম’ নামে ডাকা শুরু করলো।

‘কমসোলস্কায়া প্রাভতার’ নামক রুশ একটি পত্রিকার তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঘুমের মধ্যে থাকা একজন মানুষ জেগে থাকতে পারবে, এমনকি হাটতেও পারবে। অস্বাভাবিক এই ঘুমে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা এমনভাবে ঘুমিয়ে পড়ে যে ঘুমানোর সাথে সাথে তারা নাক ডাকতে শুরু করে। ঘুম থেকে জাগার পর তারা কিছুই বলতে পারেনা যে তারা কেন ও কিভাবে ঘুমিয়ে পড়েছিলো।

এই ঘুমের ব্যাধিটি শিশু থেকে শুরু করে গ্রামের সকল বয়সের মানুষদের উপর প্রভাব ফেলেছিলো। ব্যাধিটি শিশুদের মধ্যে প্রচন্ডভাবে বেড়েই চলছিলো যার কারনে বাবা-মা তাদের শিশুদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেয়।

কিছু শিশু দৃষ্টিভ্রমে ভুগতে শুরু করে। শিশুদের মধ্যে অনেকে পাখাসহ ঘোড়া দেখতে পাচ্ছিলো, কেউ তাদের বিছানায় সাপ দেখতে পাচ্ছিলো এবং তারা এটাও দেখতে পাচ্ছিলো যে কিছু পোকামাকড় তাদের হাত খেয়ে ফেলছে। এসবের কারণে গ্রামের সবাই ভয় পেতে শুরু করে।

ধীরে ধীরে বিভিন্ন জীবজন্তু এবং পশুপাখি সহ নারী পুরুষ সবাই এই রহস্যজনক ঘুমের ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে শুরু করে। ইয়েলেনা যাভোমকোভা নামক কালাচি গ্রামের এক বাসিন্দা স্থানীয় গনমাধ্যম ভ্রিমিয়াকে জানান, তার পোষা বিড়ালটি হঠাৎ করে অস্বাভাবিক আচরন করতে শুরু করেছে।

বিড়ালটি দেয়ালে এবং তার পোষা কুকুরকে এমনভাবে আক্রমন করছে যা আগে কখনো করেনি। সকালে বিড়ালটি হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পড়ে এবং সারাদিন ঘুমায়। ইয়েলেনা এতে খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে।

এভাবে আকস্মিক করে ঘুমিয়ে পড়ার খবরটি খুব দ্রুত আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। যার কারনে কিছুদিনের ভিতরেই ডাক্তার, বিজ্ঞানী,সাংবাদিক এবং শিক্ষকেরা গ্রামটিকে বারবার দেখতে আসেন। ঘুমের এই গ্রামটিকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের ধারণা ও মতবাদ উঠে আসে।

অনেকের মতে, এই রহস্যজনক ব্যাধিটির কারন হল বিভিন্ন ধরনের ড্রাগস। আরো কিছু সংখ্যাক এর মতে এর কারন অতিরিক্ত মদ্যপান। কিন্তু নিজস্ব এসব ব্যাখ্যাকে প্রমাণ করার মত সঠিক কোনো যুক্তি বা প্রমান কেউ দিতে পারেননি।

বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা এই ঘুমের ব্যাধির উপর বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরিক্ষা চালান। কিন্তু অনেক খোঁজের পরেও তারা ড্রাগের কোনো অস্তিত্ব পাননি। তবে যেহেতু এই রোগটি বেড়েই চলছিলো তারা এটাকে মানসিক সমস্যা বলে আখ্যায়িত করেন।

স্থানীয়রা এটাকে ভয়ংকর ব্যাধি মনে করতে থাকেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই ব্যাখ্যাকে সম্পূর্নভাবে ভুল বলে জানান। তারা সবসময় মনে করেন এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে।

আরো কিছু গবেষনার পর গ্রামের পাশে একটি ইউরেনিয়াম এর খনি পাওয়া যায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় খনিটি বেশ সমৃদ্ধ ছিলো। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এটাকে বন্ধ করে দেয়া হয় যার ফলে খনিটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। কিন্তু গ্রামের অদ্ভূতুরে ঘুমের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে খনিটির দিকে বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি পড়ে।

কাজাখস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তখন নড়ে বসে।মন্ত্রনালয় থেকে কিছু সংখ্যাক অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ, গবেষনাবিদ ও ডাক্তারসহ একটি পরিদর্শন দল গঠন করা হয়। বিশেষ দলগুলোকে গ্রামের বাসিন্দাদের পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়। তারা সাত হাজারের বেশি মানুষের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। দলগুলো বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পরীক্ষা চালায়। কিন্তু এতোসব পরীক্ষার পরেও দলগুলো গ্রামের মধ্যে উচ্চ বিকিরন করতে সক্ষম এমন কোনো উপাদানের সন্ধাণ পায়নি যা ক্ষতির কারন হতে পারে। যদিওবা কিছু বাড়িতে রেডিয়াম পাওয়া গিয়েছিলো তবে তা মাত্রাতিরিক্ত ছিলো না।

তবে গবেষকরা নিশ্চিত ছিলেন যে ইউরেনিয়াম খনিটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়তে শুরু করেছে। গবেষনার এক পর্যায়ে তারা নিশ্চিত হন যে খনিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও আশেপাশে এর প্রভাব রয়ে গিয়েছিলো।

ওই অঞ্চলের বাতাসের ঘনত্ব পরীক্ষার পর তারা জানান, যে খনিজ পদার্থগুলই ওই এলাকার কার্বন মনোক্সাইড ও হাইড্রোকার্বনের বাড়ার কারন।

এদিকে এর প্রভাবে অঞ্চলটিতে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রচন্ডভাবে হ্রাস পাচ্ছিলো। একারণে স্থানীয় লোকজন সামান্য পরিশ্রম করেই হাপিয়ে উঠছিলো।

এ তথ্য জানার পরপরই গ্রাম দু’টির স্থানীয় প্রশাসন অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করেন। তারা খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেখান থেকে প্রায় ২২৫টি পরিবারকে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। এর ফলে সেখানকার ঘুমের রহস্যের সমাপ্তি ঘটে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

যে গ্রামে রহস্যজনকভাবে ঘুমিয়ে পড়ে সবাই

আপডেট টাইম : ০৭:১৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রুশ সীমান্ত থেকে প্রায় ১৫০ মাইল দূরে অবস্থিত উত্তর কাজাখস্তানের দু’টি গ্রাম কালাচি ও ক্রাস্নোগরস্ক। সাবেক সোভিয়েত শাষণামলের অধীনে থাকলেও এখানে জার্মান ও রুশদের বেশ কর্তৃত্ব ছিলো।

একটা সময় এই গ্রাম দু’টোতে ছয় হাজারেরও বেশি লোক বসবাস করতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে গ্রামে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা হ্রাস পায়। কোনো এক কারণে বেশিরভাগ লোক অন্যত্র বসবাস শুরু করেন।

জনসংখ্যা হ্রাসের পর আবার নতুন করে হাজার হাজার লোক এখানে আসতে শুরু করে, তবে তাদের একটি অংশ একটি অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী হন।

ঘটনাটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসের দিকে। সবকিছুই খুব স্বাভাবিকভাবে চলছিলো। অন্যান্য দিনগুলোর মতই নতুন আরেকটি দিন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো সকলে। কিন্তু হঠাৎ করে গ্রামের অনেকে তাদের জীবনে একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করেলো।

গ্রামের অনেকেরই হঠাৎ অদ্ভুত রকমের ঘুম পাচ্ছিলো। তাদের শরীরে এক ধরনের অসম্ভব  রকমের ক্লান্তি দেখা দিলো যে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না। রাস্তার পাশে বসে থাকা অবস্থায়ও অনেকে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিলো। তাদের মধ্যে অনেকেই যারা কর্মস্থলে ছিলো তারা কর্মস্থানের টেবিলে ঘুমিয়ে পড়ছিলো। দু’টি গ্রামেরই প্রায় দেড়শো জন মানুষ এই অদ্ভুত ঘুমের ব্যাধীতে ভোগেন।

এই ঘুমের ব্যাধীটি এতোটাই ছড়াচ্ছিলো যে যারা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলো তারা তাদের চোখ খুলে রাখতে পারছিলো না এবং যারা এভাবে আকস্মিক ঘুমিয়ে পড়ছিলো তারা ঘুম থেকে জাগার পর কিছুই মনে রাখতে পারছিলো না। যেমন, কখন তারা ঘুমিয়েছিলো অথবা তারা কেন ঘুমিয়েছিলো এসব কিছুই তারা মনে করতে পারছিলো না। মাথা ব্যাথা এবং শারীরিক দুর্বলতাও ছিলো তাদের। এমনকি এটাও হয়েছে যে তারা একদিনের ভিতর পাঁচ থেকে ছয়বার ঘুমিয়েছে।

গ্রামের এই অস্বাভাবিক ব্যাপারটি পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। অনেকে একে ‘ফাঁপা ঘুম’ নামে ডাকা শুরু করলো।

‘কমসোলস্কায়া প্রাভতার’ নামক রুশ একটি পত্রিকার তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঘুমের মধ্যে থাকা একজন মানুষ জেগে থাকতে পারবে, এমনকি হাটতেও পারবে। অস্বাভাবিক এই ঘুমে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা এমনভাবে ঘুমিয়ে পড়ে যে ঘুমানোর সাথে সাথে তারা নাক ডাকতে শুরু করে। ঘুম থেকে জাগার পর তারা কিছুই বলতে পারেনা যে তারা কেন ও কিভাবে ঘুমিয়ে পড়েছিলো।

এই ঘুমের ব্যাধিটি শিশু থেকে শুরু করে গ্রামের সকল বয়সের মানুষদের উপর প্রভাব ফেলেছিলো। ব্যাধিটি শিশুদের মধ্যে প্রচন্ডভাবে বেড়েই চলছিলো যার কারনে বাবা-মা তাদের শিশুদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেয়।

কিছু শিশু দৃষ্টিভ্রমে ভুগতে শুরু করে। শিশুদের মধ্যে অনেকে পাখাসহ ঘোড়া দেখতে পাচ্ছিলো, কেউ তাদের বিছানায় সাপ দেখতে পাচ্ছিলো এবং তারা এটাও দেখতে পাচ্ছিলো যে কিছু পোকামাকড় তাদের হাত খেয়ে ফেলছে। এসবের কারণে গ্রামের সবাই ভয় পেতে শুরু করে।

ধীরে ধীরে বিভিন্ন জীবজন্তু এবং পশুপাখি সহ নারী পুরুষ সবাই এই রহস্যজনক ঘুমের ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে শুরু করে। ইয়েলেনা যাভোমকোভা নামক কালাচি গ্রামের এক বাসিন্দা স্থানীয় গনমাধ্যম ভ্রিমিয়াকে জানান, তার পোষা বিড়ালটি হঠাৎ করে অস্বাভাবিক আচরন করতে শুরু করেছে।

বিড়ালটি দেয়ালে এবং তার পোষা কুকুরকে এমনভাবে আক্রমন করছে যা আগে কখনো করেনি। সকালে বিড়ালটি হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পড়ে এবং সারাদিন ঘুমায়। ইয়েলেনা এতে খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে।

এভাবে আকস্মিক করে ঘুমিয়ে পড়ার খবরটি খুব দ্রুত আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। যার কারনে কিছুদিনের ভিতরেই ডাক্তার, বিজ্ঞানী,সাংবাদিক এবং শিক্ষকেরা গ্রামটিকে বারবার দেখতে আসেন। ঘুমের এই গ্রামটিকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের ধারণা ও মতবাদ উঠে আসে।

অনেকের মতে, এই রহস্যজনক ব্যাধিটির কারন হল বিভিন্ন ধরনের ড্রাগস। আরো কিছু সংখ্যাক এর মতে এর কারন অতিরিক্ত মদ্যপান। কিন্তু নিজস্ব এসব ব্যাখ্যাকে প্রমাণ করার মত সঠিক কোনো যুক্তি বা প্রমান কেউ দিতে পারেননি।

বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা এই ঘুমের ব্যাধির উপর বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরিক্ষা চালান। কিন্তু অনেক খোঁজের পরেও তারা ড্রাগের কোনো অস্তিত্ব পাননি। তবে যেহেতু এই রোগটি বেড়েই চলছিলো তারা এটাকে মানসিক সমস্যা বলে আখ্যায়িত করেন।

স্থানীয়রা এটাকে ভয়ংকর ব্যাধি মনে করতে থাকেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই ব্যাখ্যাকে সম্পূর্নভাবে ভুল বলে জানান। তারা সবসময় মনে করেন এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে।

আরো কিছু গবেষনার পর গ্রামের পাশে একটি ইউরেনিয়াম এর খনি পাওয়া যায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় খনিটি বেশ সমৃদ্ধ ছিলো। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এটাকে বন্ধ করে দেয়া হয় যার ফলে খনিটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। কিন্তু গ্রামের অদ্ভূতুরে ঘুমের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে খনিটির দিকে বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি পড়ে।

কাজাখস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তখন নড়ে বসে।মন্ত্রনালয় থেকে কিছু সংখ্যাক অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ, গবেষনাবিদ ও ডাক্তারসহ একটি পরিদর্শন দল গঠন করা হয়। বিশেষ দলগুলোকে গ্রামের বাসিন্দাদের পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়। তারা সাত হাজারের বেশি মানুষের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। দলগুলো বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পরীক্ষা চালায়। কিন্তু এতোসব পরীক্ষার পরেও দলগুলো গ্রামের মধ্যে উচ্চ বিকিরন করতে সক্ষম এমন কোনো উপাদানের সন্ধাণ পায়নি যা ক্ষতির কারন হতে পারে। যদিওবা কিছু বাড়িতে রেডিয়াম পাওয়া গিয়েছিলো তবে তা মাত্রাতিরিক্ত ছিলো না।

তবে গবেষকরা নিশ্চিত ছিলেন যে ইউরেনিয়াম খনিটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়তে শুরু করেছে। গবেষনার এক পর্যায়ে তারা নিশ্চিত হন যে খনিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও আশেপাশে এর প্রভাব রয়ে গিয়েছিলো।

ওই অঞ্চলের বাতাসের ঘনত্ব পরীক্ষার পর তারা জানান, যে খনিজ পদার্থগুলই ওই এলাকার কার্বন মনোক্সাইড ও হাইড্রোকার্বনের বাড়ার কারন।

এদিকে এর প্রভাবে অঞ্চলটিতে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রচন্ডভাবে হ্রাস পাচ্ছিলো। একারণে স্থানীয় লোকজন সামান্য পরিশ্রম করেই হাপিয়ে উঠছিলো।

এ তথ্য জানার পরপরই গ্রাম দু’টির স্থানীয় প্রশাসন অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করেন। তারা খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেখান থেকে প্রায় ২২৫টি পরিবারকে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। এর ফলে সেখানকার ঘুমের রহস্যের সমাপ্তি ঘটে।